বিষণ্ন কোরবানির ঈদ আজ!


জুলাই ২১ ২০২১

ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ- গত দুই বছরে মানুষ যেন এই চিরাচরিত কথাটি এক প্রকার ভুলেই যেতে বসেছে। ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ মানেই কয়েক দিন আগে থেকে কোরবানির হাটে গিয়ে পশু কেনা, আনন্দের সঙ্গে সেই পশু নিয়ে বাড়ি ফেরা। ঈদের দিন নামাজ আদায়ের পর কোলাকোলি একটি চিরচেনা দৃশ্য। এর পর কোরবানি করা, মাংস প্রক্রিয়াকরণ, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেওয়া এবং নিজেদের খাওয়া-দাওয়া। এর পর কয়েক দিন ধরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি এবং ঈদ কেন্দ্রীক নানা আনন্দ-বিনোদনের আয়োজন এদেশের মানুষের শত-সহস্র বছরের ঐতিহ্য।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে গত বছরের কোরবানির ঈদে এসব কর্মকাণ্ড যেমন করা সম্ভব হয়নি, তেমনি এ বছরও হবে না। কারণ গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করা এই দুর্যোগ থেকে মানবজাতিকে রক্ষায় বিশ্বব্যাপী চলছে নানা বিধিনিষেধ। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বাভাবিক কারণেই গত বছরের মতো এবারো ঘরবন্দী ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে।

বলা যায়, গত বছরের চেয়ে এবারের কোরবানির ঈদ আরো ‘পানসে’ হবে। কারণ আগের বছর যখন কোরবানির ঈদ হয়েছে তখনকার করোনা পরিস্থিতির চেয়ে এ বছর ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ফলে বিধিনিষেধও বেড়েছে। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই উৎসব উপলক্ষে বিশেষ বিবেচনায় মাত্র ৮ দিনের জন্য লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। তবে ঈদের নামাজ আদায় থেকে শুরু করে কোরবানিসহ সমস্ত কর্মকাণ্ডে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য বিধিনিষেধ মানার বাধ্যবাধকতা। ফলে ঈদের উৎসব হবে অনেকটা ঘর বা বাড়ি কেন্দ্রীক।

আবার দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরের করোনা মহামারির কারণে অনেকেই অর্থনৈতিক সংকটে আছেন। কেউ চাকরি, কেউ কর্ম বা উপার্জন পুরোটাই হারিয়েছন। কারো কারো উপার্জন আগের চেয়ে কমে গেছে অনেক। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের অবস্থা তো অবর্ণনীয়। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, অতীতে কোরবানি দেওয়া মানুষদের একটা বিরাট অংশ এ বছর সে ইবাদতটি আদায় করতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের এবং তাদের কারণে আরো অনেক মানুষের ঈদের আনন্দটা ম্লান হয়ে গেছে।

এদিকে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে লকডাউনের বিধিবিধান শিথিল করা হলেও ঈদের একদিন পর থেকেই রয়েছে টানা ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এ কারণে প্রতি বছর যারা শহর ছেড়ে গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ করতে যান, তাদের একটা বিরাট অংশ পরিবার তথা আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকছেন এবারের ঈদে। ফলে ঈদে আনন্দ ভাগাভাগির যে ঐহিত্য, সেটাও পুরোপুরি হয়ে উঠছে না। আবার যারা নানা ঝক্কি-ঝামেলা সহ্য করে গ্রামে গেছেন, তাদের অনেকেরই রাজধানীতে ফেরার দুশ্চিন্তা রয়েছে। কারণ ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকেই শুরু হবে কঠোর লকডাউন। যা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

আরেকটি বিষয় রয়েছে, যেটা আরো বেদনাদায়ক। সেটা হলো- আজ এমন এক সময়ে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন দেশের অনেক মানুষ বা পরিবার প্রাণঘাতী করেনার কারণে (অন্যান্য বিষয় না হয় বাদ-ই দিলাম) তাদের স্বজনকে ইতোমধ্যে হারিয়েছেন। আজ এই ঈদের দিনও অনেকের স্বজন না ফেরার দেশে চলে যাবেন। আবার অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হয় হাসপাতালের বেডে কিংবা বাড়িতে শয্যাশায়ী। তাদের কথা চিন্তা করলে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায় বৈকি!