স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছেনা তামাক নিয়ন্ত্রণ লাইসেন্সিং কার্যক্রম


ফেব্রুয়ারি ২৪ ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক “সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিথ” ২০১৬’র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিমূর্ল করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার আলোকেই বাংলাদেশে তামাক বিরোধী সংস্থাগুলির নিরলস প্রচেষ্টা এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যকর ভূমিকায় ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ প্রকাশিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সকল দপ্তর/ সংস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ) নির্দেশিকাটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২ মার্চ ২০২১ এ (স্মারক নং: ৪৬.০০.০০০০.০৮৫.০৬.০৪২.২০১৮—১১৮) স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বছর পেরিয়ে এলেও উক্ত নির্দেশিকা বাস্তবায়নে এখনও বেশীরভাগ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান উদাসিন।অত্র প্রজ্ঞাপন জারি করার পূর্বে বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ও বিপণন নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছিলনা। এমনকি তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্তদের নির্ধারিত কোন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণেরও ব্যবস্থা ছিলনা। এ কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকা, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করা হত। সহজলভ্যতা ও সহজপ্রাপ্যতার কারণে বাড়ছে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা। অধিকন্তু, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য—৩ অর্জনে আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসি’র বাস্তবায়ন ও তামাকজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে এদেশের জনগণকে রক্ষার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের সকল মন্ত্রণালয়/ বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা, মিডিয়া, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি’র সমন্বিত কার্যকর অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ লক্ষ্যেই স্থানীয় সরকার বিভাগ “তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ণ নির্দেশিকা” প্রণয়ন করেছে এবং এর আলোকে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ নির্দেশিকা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি হতে রক্ষা করবে। এই নির্দেশিকাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আওতাভূক্ত সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের মাত্রা হ্রাস করে জনসাধারণকে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন এ নির্দেশিকার মূল লক্ষ্য। তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী/কোম্পানি ও বিক্রেতাকে লাইসেন্সের আওতায় এনে, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে আনা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পালনে তামাক কোম্পানী ও বিক্রেতাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নির্দেশিকাটির লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন সংক্রান্ত নির্দেশনা অংশে বলা হয়; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র বা যেখানে তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়—বিক্রয় হবে তার জন্য পৃথক লাইসেন্স অবশ্যই প্রদান করতে হবে এবং প্রতিবছর নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে আবেদনের মাধ্যমে উক্ত লাইসেন্স নবায়ণ করতে হবে। লাইসেন্স গ্রহিতাদের অবশ্যই ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)’ এ বর্ণিত সকল বিধি—নিষেধ মেনে চলতে হবে। একটি লাইসেন্স গ্রহণকারী একটি জায়গায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। একাধিক জায়গার/দোকানের জন্য পৃথক লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে এবং কোন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খাবারের দোকান, মুদি দোকান ও রেষ্টুুরেন্টে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের লাইসেন্স প্রদান করা হবেনা। হোল্ডিং নম্বর ব্যতীত কোন প্রকার তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রকে লাইসেন্স প্রদান করা হবেনা। সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের আশেপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য কোন লাইসেন্স প্রদান করা হবেনা। তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে আওতা বৃদ্ধি করতে পারবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ ব্যতীত জনসংখ্যার ঘনত্ব ও চাহিদা বিবেচনা করে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রের লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক নিধার্রিত হবে। তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় সংক্রান্ত ট্রেড লাইসেন্স হস্তান্তর যোগ্য নয় হিসাবে বিবেচিত হবে এবং লাইসেন্সটির একটি কপি বিক্রয় কেন্দ্রে অবশ্যই দৃশ্যমান অবস্থায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে প্রস্তুত নয় বা বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন নেই এমন কোন তামাকজাত দ্রব্য (বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, জর্দা, সাদাপাতা, গুল, খৈনি, নস্যি, ইলেকট্রনিক সিগারেট, তরল নিকোটিন, হিটেড সিগারেট, ভেন্ডিং মেশিন বা এমন কোন উপাদান যা নিকোটিন যুক্ত বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণে সহায়ক) এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ক বাণী ব্যতীত কোন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করা যাবে না। তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুত হয় এমন চুল্লি বা কারখানাকে ও লাইসেন্সের আওতায় আনতে হবে এবং সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের আশেপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে কোন প্রকার চুল্লি বা কারখানাকে লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না। আশা করা যায়, তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কতৃর্ক প্রকাশিত “তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ণ নির্দেশিকা” এর লাইসেন্সিং বিষয়টি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক যথাযথ বাস্তবায়ন করা হলে, প্রধানমন্ত্রীর ‘আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত’ ঘোষণা বাস্তবায়নে মাইলফলক ভূমিকা রাখবে।