ইউনিয়ন আ‘লীগে নাম নেই অথচ সুপারিশে সহ-সভাপতি দেখানোয় চরম ক্ষুব্দ স্থানীয় আ‘লীগ


নভেম্বর ১৯ ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম ফজলুল হকের বিরুদ্ধে তৃনমূল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলের পদপদবী নাই এমন এক জনকে মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রে সুপারিশ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সুপারিশকৃত শাহাজান সিরাজ জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও তার পরিবার জামায়াত -শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির কোন পদে না থাকলেও তার নাম দলের কেন্দ্রের কাছে পাঠানোয় চরম ক্ষুব্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তৃনমূলের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ শাহাজান সিরাজ পদে না থাকলেও তাকে কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দেখিয়ে কেন্দ্রে দলীয় মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের গত ২৮ অক্টোবর তারিখে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জিএম রেজাউল করিম এর নাম কেন্দ্র আওয়ামী লীগের বরাবর পাঠানো সিন্ধান্ত হয়। রেজাউল করিম কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। গত ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজাউল করিমকে নৌকা প্রতিক তুলে দেন। কিন্ত নির্বাচনে কতিপয় নেতাদের অসযোগীতার কারনে তীব্র প্রতিদ্ধন্দিতার পরও সামান্য ভোটের তিনি পরাজিত হয়। এর পর থেকে বিগত ৫ বছর দলের সভাপতি হিসেবে কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কে সুসংগঠিত করতে নিরলস ভাবে কাজ করে দলের ও সাধারন মানুষের কাছে আস্তা অর্জন করেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় মনোয়নের জন্য রেজুলেসন করে কপি উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের কাছে প্রেরণ করেন।
অভিযোগ উঠেছে, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম ফজলুল হকের বাড়ী শ্যামনগরে এবং তার ছেলে আতাউল হক দোলন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হওয়ায় বাপ বেটা মিলে দলের মধ্যে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীরকে মনোনয়ন এনে দিতে নানা ধরনের ছলচাতুরী করতে থাকে। কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রেজুলেশনকে পাশ কাটিয়ে ছেলে এবং পিতা দলের দুই পদে থাকা জেলা এবং উপজেলার শীর্ষ পদে থেকে তৃনমূল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ওই ইউনিয়নে তাদের পছন্দের দুই জনের নাম অন্তভুক্ত করে কেন্দ্রে দলীয় মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করেছেন এমন অভিযোগ তৃনমূল আওয়ামী লীগের। এরা হলো মো: শাহাজান সিরাজ ও আমিরুল ইসলাম মল্লিক। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক শাহজাহান সিরাজ এর পক্ষে সুপারিশ করেন। শাহাজান সিরাজ জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ছিলেন। তার ভাই মাওলানা আমিনুর রহমান ৫ নং কৈখালী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমীর, তার পরিবারের আব্দুল্লাহ আল মামুন ইউনিয়নের জামায়াতের নেতা এবং তার পরিবারের আল-আমিন শ্যামনগর উপজেলা ছাত্র শিবিরের শীর্ষ পদে ছিলেন। শাহাজান সিরাজ ২০১৬ সালে কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদে মটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে নির্বাচনের ঠিক পূর্বে নির্বাচন বয়কট করে জামায়াতের সমর্থীত প্রার্থী আব্দুর রহিমের পক্ষে বিজয়ী করতে সহযোগী করেন। এসময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিএম রেজাউল করিমের নৌকা প্রতিক কে পরাজিত করতে সর্বশক্তি ব্যবহার করে সফল হন।
কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম রেজাউল করিম জানান, তৃনমূলের একক সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর এখন আবার সেখানে আরও তিনজন বিতর্কীত ব্যক্তিদের নাম জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক ও সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম সুপারিশ করে কেন্দ্র আওয়ামী লীগের বরাবর পাঠিয়েছেন যা দু:খজনক।
শাহাজান সিরাজ জানান,তিনি আওয়ামী লীগের কৈখালী ইউনিয়ন কমিটির কোন পদে নেই।তবে জাতীয় পার্টি থেকে দলে যোগদান করে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে আসছেন।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক জানান, কৈখালী ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগ একক ভাবে জিএম রেজাউল করিমের পক্ষে রেজুলেশন করে পাঠানো হলেও আমরা জেলা আওয়ামী লীগ আরও তিন জনের নাম অন্তভুক্ত করেছি এটা সঠিক। তবে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তিনি অস্বিকার করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে তিনি ও সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম দুই জনই স্বাক্ষর করে তালিকা কেন্দ্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়েছে। তবে সাহাজান সিরাজ আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন কমিটির কোন পদে না থাকলেও সে জাতীয়পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে বেশকয়েক বছর আগে। তবে সাহাজান সিরাজকে আওয়ামীলীগের কৈখালী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রে সুপারিশ করার বিষয়টি তার অজান্তে হতে পারে বলে তিনি জানান। শাহাজান জনপ্রিয় তবে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কোন পদে তিনি নেই।