একটা স্বপ্নকে পরিবারের আর্থিক ঢাল বানিয়েছে খাদিজা


মে ৪ ২০২১

গ্রামের খুব সাধারণ এক মেয়ের গল্প। অল্প বয়সে সমাজ বাস্তবতার বলি হওয়ার পরেও একটি মেয়ের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প এটি। আসুন গল্প শুনি। গ্রামের আলো-বাতাসে, প্রকৃতির মাঝে মেয়েটির বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকে খুবই চঞ্চল প্রকৃতির মেয়েটি। দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে সবচেয়ে দুরন্ত ছিলো মেয়েটি। গ্রাম্য পরিবেশে প্রকৃতির মাঝে অবিরাম ছুটে চলা। মেয়েটি ঘুরতে খুব ভালোবাসতো, ভালবাসতো রান্না করতে।

মেয়েটি লেখাপড়ায় খুব বেশি ভালো কখনোই ছিলো না,তাই বলে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহের কমতি কখনোই ছিলো না। মেয়েটির আগ্রহ থাকলেই তো হবেনা অন্যদেরও চাইতে হবে। সমাজ বাস্তবতার বলি হয়ে এস.এস.সি পরীক্ষার আগেই মেয়েটিকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। কেউ সেদিন জানতে চায়নি বিয়ে সে করতে চায় কিনা? আমারও জানা হয়নি-কি লাভ পুরানো ক্ষত নতুন করে জাগিয়ে মেয়েটির হৃদয় রক্তাক্ত করে।

মেয়েটির স্বামী চাইলেও এসএসসি পাসের পর, সংসার নামক এক অদ্ভুত মায়ার চাপে আটকে গিয়ে মেয়েটির পড়াশুনাটা আর করা হয়ে ওঠেনি। মেয়েটির বাবা কখনোই চাইতেন না মেয়ে বাইরে বের হয়ে কিছু করুক। শালীনতা বজায় রেখে সকল কাজ করার অধিকার একজন নারীর নিশ্চয়ই আছে।

সব কিছুতেই ভালো-খারাপ, এই দুটো দিক থাকে। লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে হয়ে যাওয়া যদি খারাপ দিক হয়, তাহলে ভালো দিক মেয়েটি বিয়ের পর এমন একজন স্বামী পাওয়া, যে মেয়েটিকে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে, নতুনভাবে কিছু করে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করেছে।

মেয়েটি বাবার বাড়িতে কিছু করতে না পারলেও, বিয়ের পর মেয়েটি তার মা, ননদ, শাশুড়ি, স্বামীর সহযোগিতায় কিছু করতে পেরেছে। সবার উৎসাহে কিছু একটা করার চিন্তা থেকে নিজের হাতে পুঁথি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিস দিয়েই মেয়েটির উদ্যোক্তা জীবন শুরু। দুরু দুরু বুকে মেয়েটি সেদিন স্বপ্ল পরিসরে যে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছিলো, আজ সেটা মেয়েটির জীবনে সুবাস ছড়াচ্ছে।

করোনা কালীন সময়ে মেয়েটির “সাতক্ষীরা অনলাইন শপ”-গ্রুপে যুক্ত হওয়া। মেয়েটি কি আর তখন জানতো “সাতক্ষীরা অনলাইন শপ”-গ্রুপে যুক্ত হওয়া মেয়েটির জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা। নিজের বাড়িতে টুকটাক পুঁথির জিনিস তৈরি করা মেয়েটির পরিপূর্ণ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ। সাতক্ষীরা অনলাইন শপ গ্রুপের এডমিন ইমরান স্যারের পরামর্শে মাত্র ৫০০০ টাকা দিয়ে ঘি, মধু, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, খেজুরের গুড়, পাটালি, চালের গুড়া নিয়ে নতুন করে শুরু। কিছুদিন পরে নতুনভাবে যুক্ত হয় নিজের হাতে ভাঙানো মরিচ-গুড়া, হলুদ-গুড়া, জিরা-গুড়া, ধনিয়া-গুড়া সহ বিভিন্ন মসল্লা।

৫০০০ টাকার মুলধনকে মেয়েটি মাত্র ৪ মাসের ব্যবধানে সেটাকে প্রায় ৫০০০০ টাকায় নিয়ে গেছে। খুব কম মনে হচ্ছে তাইনা? টাকার পরিমানটাই হয়ত শুধু চোখে পড়ছে কিন্ত একটা মেয়ে স্বামী, সন্তান, সংসার সামলে নিজের ছোট্ট একটা স্বপ্নকে অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে পরিবারের আর্থিক ঢাল বানিয়ে ফেলল সেটা চোখে পড়লো না।

“সাতক্ষীরা অনলাইন শপ”-গ্রুপের সাথে মেয়েটির পথচলা শুরু ৮ই নভেম্বর, ২০২০ ইং তারিখে। এই পথচলায় পাশে থেকে সাহস দেওয়ার জন্য মেয়েটি বারবার কৃতঞ্জতা জানিয়েছে স্বামী, সন্তান, মা-ভাই, শ্বাশুড়ি-ননদ এবং শেখ ইমরান হোসেন স্যারের প্রতি।

মেয়েটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি জানতে চাওয়ায় বলেছিলো- এভাবেই আমার উদ্যোক্তা জীবনকে আমি এগিয়ে নিতে চাই। এমন দিনের স্বপ্ন দেখি যেদিন আমার পরিবারে দ্বায়িত্ব আমিও নিতে পারব! সমাজে উদ্যোক্তা হিসাবে আমার আলাদা পরিচয় থাকবে। সৎ পথে ৫ টাকা উপার্জন করার যে শান্তি সেটা সবাই বুঝবে না।

সমাজের অন্যান্য বেকার গৃহবধূদের উদ্দেশ্য মেয়েটি বলেন যার যার জায়গা থেকে মেয়ারা যদি সমাজের জন্য কিছু করতে এগিয়ে আসেন তাহলে অচিরেই সমাজের চেহারা পাল্টে যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা সমাজের বুকে নিজের একটি পরিচয় সব মেয়েরই থাকা উচিত।

মেয়েটির নাম: খাদিজাতুল কোবরা

ফেইসবুকে পেজের নামঃ খাঁটি পণ্য

ওয়েব সাইটের নামঃ www.satkhiraonlineshop.com

লিখেছেনঃ সাতক্ষীরা অনলাইন শপের উদ্যোক্তা নার্গিস সুলতানা

নার্গিসের পেজের নামঃ লিপির আয়োজন

কৃতজ্ঞতায়ঃ

শেখ ইমরান হোসেন

এডমিনঃ Satkhira Online Shop Group

পরিচালকঃ সাতক্ষীরা অনলাইন শপ