করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের আশঙ্কায় সচিবালয়ে মাস্ক পরায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। মাস্ক না পরলে সেবা দেয়া হবে না, মন্ত্রণালয়গুলোতে প্রবেশ করা যাবে না, সচিবালয়ের লিফটেও উঠতে দেয়া হবে না-এমন সিদ্ধান্তের ফেস্টুন, ব্যানার, স্টিকার শোভা পাচ্ছে সচিবালয়জুড়ে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার পর সচিবালয়ে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ পদক্ষেপের পর সচিবালয়ে মাস্ক ব্যবহারের হার অনেক বেড়ে গেছে। সোমবার সচিবালয় ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
সচিবালয়ে এক ও দুই নম্বর গেটের মাঝখানে দর্শনার্থী কক্ষটিতে প্রবেশের সামনে (ব্যাগ স্ক্যান করা কক্ষের সামনে) দুটি বড় ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাতে লেখা- ‘মাস্ক পরিধান করুন, সেবা নিন’, ‘ওয়্যার মাস্ক, গেট সার্ভিস’। দর্শনার্থী কক্ষের মধ্যেও এমন ব্যানার রয়েছে। প্রবেশ করে ৭ নম্বর ভবনের সামনেও এমন ব্যানার রয়েছে।
সাত নম্বর ভবনের মাঝখানের লিফটের সামনে স্টিকার লাগানো আছে- ‘মাস্ক ব্যবহার ব্যতীত লিফটে প্রবেশ নিষেধ।’ আছে- ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ স্টিকারও। সচিবালয়ের সবচেয়ে বড় সাত নম্বর ভবনে দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবেশ মুখে রয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়্যার মাস্ক, গেট সার্ভিস’ ব্যানার। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ব্যানার ‘মাস্ক ব্যবহার ব্যতীত লিফটে প্রবেশ নিষেধ।’
সাত নম্বর ভবনের লিফটগুলোর সামনে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মাস্ক ব্যবহার ব্যতীত প্রবেশ নিষেধ’ ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ লেখা ব্যানার রয়েছে। এই ভবনের দোতলায় রয়েছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠেই চোখে পড়ে ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ লেখা তিনটি ফেস্টুন।
এই ভবনের তৃতীয় তলায় মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রবেশ মুখে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ফেস্টুন রয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ ফেস্টুন রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সামনে ‘মাস্ক ব্যবহার ব্যতীত প্রবেশ নিষেধ’, ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’- এমন ব্যানার, ফেস্টুন, স্টিকার রয়েছে। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাস্ক না নিয়ে এলে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে তাদের মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ-১) কাজী ওয়াছি বলেন, ‘শীতের মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মাস্ক পরার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেটা মানছি। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও সেটা মানছে। সবাই মাস্ক পরেই আসছেন। মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়ে আমরা সচিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার, স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাস্ক পরার বিষয়টি আগে থেকেই ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর বলার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হলে মাস্ক পরার বিষয়টি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর দ্বিতীয় পর্যায় মোকাবেলায় সরকারী-বেসরকারী সব দফতরে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিতে গত ২৫ অক্টোবর সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরে ৩ অক্টোবর ফের নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এই নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) কাছে পাঠানো হয়েছে।
সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, আসন্ন শীত মৌসুমে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্ভাব্য এই সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এবং মাঠ পর্যায়ে সকলের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অথচ সম্প্রতি সকলের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে কিছুটা শিথিলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এবং মাঠ পর্যায়ের সকল দফতরে ‘মাস্ক ব্যবহার ব্যতীত প্রবেশ নিষেধ/নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’, ‘মাস্ক পরিধান করুন, সেবা নিন/ওয়্যার মাস্ক, গেট সার্ভিস’ ইত্যাদি বার্তা উপযুক্ত মাধ্যমে (পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড ইত্যাদি) দৃশ্যমান করাসহ সকল সেবা প্রদানকারী।