আওয়ামী লীগে কি হচ্ছে ?


অক্টোবর ১০ ২০২০

সাতক্ষীরা জার্নাল: টানা তিনবার ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। তৃতীয় মেয়াদে এসে সরকার নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক সরকার যখন সমস্যায় পড়ে, তখন সেই রাজনৈতিক সংগঠনটি সমস্যা মোকাবেলার জন্য সর্বাত্বকভাবে কাজ করে। এটাই গণতান্ত্রিক রীতি এবং কৌশল। একটি রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসে তার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য। একটি রাজনৈতিক দলের আর্দশ নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ হয় ওই রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে।

সরকারে যেমন আওয়ামী লীগের ভূমিকা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। তেমনি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ঘটনায় সুস্পষ্ট ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে, বলে অনেকে মনে করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ একদিকে যেমন অন্তঃকলহে জড়িয়ে আছে তেমনি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের নিশ্চুপ থাকার মধ্য দিয়ে দলের তৃণমূলের নেতা কর্মীরাও করণীয় সম্পর্কে কোন দিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না। একমাত্র তাদের ভরসা হলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটিতে কি হচ্ছে। কেন দলটি যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না- বিভিন্ন ক্ষেত্রে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাচ্ছে অনেক গুলো কারণ রয়েছে।

১। দলের হেভিওয়েট নেতাদের উদাসিনতা
আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা এবং দলের সাংগঠনিক তৎপরতার ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন। হাতে গোনা কয়েকজন সিনিয়র নেতা দলের জন্য কাজ করছেন। এদের মধ্যে আবার দু’জন সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে বাঁধা পড়েছে। এ সময় নেতা-কর্মীরা কিভাবে কাজ করবেন। কোনটিকে তারা অগ্রাধিকার দেবেন। তাদের কৌশল কি হবে ইত্যাদি নিয়ে যে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা যাওয়ার সেই নির্দেশনা যাওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলী থেকে অনেক সিনিয়র নেতা এখন বসে আছেন। প্রেসিডিয়ামে দুই একজন ছাড়া কাউকেই তেমন উদ্যোগী এবং সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে দলটি একমাত্র শেখ হাসিনা নির্ভর হয়ে পড়ছে। তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকার পরও দলকে যে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেটা ছাড়া কেউ উদ্যোগী হয়ে কোন কার্যত্রম বা কোন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারছেন না।

২। কমিটি নিয়ে অনিশ্চয়তা
আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি গঠন দীর্ঘদিন ধরে সম্পন্ন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৪০টি জেলা থেকে কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছিলো। সেই কমিটিতে বির্তকিত ব্যক্তিদের নাম এবং জেলার সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের ব্যক্তিদের নামে ভরপুর ছিলো- এ রকম অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে এই কমিটি গুলো এখন পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি। বরং এই কমিটি গুলোর নাম গুলো যাচাই-বাছাই এর কাজ চলছে। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা, কোন্দল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে এই কমিটি নিয়ে বিভিন্ন বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে এক ধরণের মুখোমুখি অবস্থান চলছে। এটি দলের সাংগঠনিক তৎপরতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

৩। কমিটি বিহীন অঙ্গ সহযোগী সংগঠন
আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন গুলোর পূর্নাঙ্গ কমিটি নাই দীর্ঘদিন। কমিটি না থাকার ফলে এই অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো তেমন কাজ করতে পারছে না। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি কাজ করে যে অঙ্গ সহযোগী সংগঠন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ।
ছাত্রলীগের কর্মকান্ড এখন অনেকটাই থিতিয়ে পড়েছে। কারণ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় ছাত্রলীগ একটু কোণঠাসা। যুবলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় যুবলীগের কার্যক্রম এক রকম স্তিমিত হয়ে আছে। এই সমস্ত বাস্তবতার কারণেই আওয়ামী লীগ বর্তমান সময়ে যেভাবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মাঠে নামার কথা বা বক্তব্য রাখার কথা- সে রকম অবস্থান নিতে পারছে না। বরং কিছু আওয়ামী লীগের নেতাদের বিক্ষিপ্তভাবে বত্তৃতা বিবৃতির মধ্যেই বিরোধী দলের মোকাবেলার কৌশল চলছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের এখন সাংগঠনিকভাবে আরও বেশি করে ক্রিয়াশীল হওয়া, জনগণের পাশে যাওয়া এবং জনগণকে প্রকৃত বিষয়গুলো বোঝানোটা অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই কাজে এখন যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।