বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ!


সেপ্টেম্বর ২৬ ২০২০

সাতক্ষীরা জার্নাল: ওজোপাডিকো সাতক্ষীরার আওতায় থাকা পোষ্টপেইড মিটার থেকে প্রি-পেইড মিটার সংযোগের মাঝামঝি সময়ে গ্রহকদের নানাভাবে আর্থিক দন্ড আর হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। নানা ছলচাতুরি করে মিটার প্রতি হাজার হাজার টাকা অনৈতিক ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এমনকি একই মিটারে ২বার বা ৩বার বকেয়া বিল দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় অব্যহত আছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ওজোপাডিকো সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হকসহ ৫জনকে বিবাদী করে আইনজীবির মাধ্যমে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেছেন শহরের পুরতান সাতক্ষীরার ফাজেল গাজীর ছেলে শওকাত হোসেন। লিগ্যাল নোটিশ প্রদানের পর ইতোমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তদের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী ছাড়াও প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, সহকারি হিসাব রক্ষক লুৎফর রহমান, মিটার রিডার গণেশ চন্দ্র সরকার ও এসএএ খোরশেদ আলম। জেলার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের মৃত ফাজেল গাজীর ছেলে শওহাত হোসেন বর্তমানে শহরের পুরাতন সাতক্ষীরার বাসিন্দা জানান, পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকায় ২০০৯ সালে জমি ক্রয় পূর্বক একটি বাড়ি তৈরি করেন। বাড়িতে একটি আবাসিক মিটার সংযোগ নেন। যার মিটার নং- ৩২৫৮১০১ এবং গ্রাহক নং- ১৩২৭।
গেল বছরের শুরুতে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার মধ্যে প্রি-পেইড মিটার সংযুক্ত করার কাজ শুরু হয়। বিধিমোতাবেক শহরের পুরাতন সাতক্ষীরার শওকাত হোসেনের বাড়িতে নতুন প্রি-পেইড মিটার যুক্ত করেন বিদ্যুৎ বিভাগ সাতক্ষীরা অফিস। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগ পুরাতন মিটারে বকেয়া থাকা ৪০০ ইউনিটের বিপরিতে ৪ হাজার ৭৬ টাকার একটি বিল প্রদান করেন গ্রাহকের অনুকুলে। যার বিল ইস্যুর তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৯। বিল পরিশোধের শেষ তারিখ থাকে ২৭ মে ২০১৯। বিলটি গত ২৪ জুন ২০১৯ তারিখে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, সাতক্ষীরা শাখায় প্রদান করা হয়। বিল কপির উপর উক্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরিশোধের সিল মোহর সংযুক্ত করেন।
এরপর বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ ২৪ মে ২০১৯ ওই গ্রাহকের অনুকুলে একই মিটার নাম্বারে ১৬৯ ইউনিটের বিপরিতে ৫ হাজার ৯১ টাকার আরও একটি বিল প্রদান করেন। যা ২০ জুন ২০১৯ তারিখ পরিশোধের শেষ দিন দেখানো হয়। বিলটি পেয়ে উক্ত গ্রাহক কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে সময় বর্ধিত পূর্বক পূবালী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ বিলটি পরিশোধ করেন।
এরপর ওই একই গ্রাহককে একই মিটারের বিপরিতে বকেয়ার অভিযোগ এনে ১৬৯ ইউনিটের বিপরিতে ১ হাজার ৫৮ টাকার আরও একটি বিল প্রদান করেন। বিলটির ইস্যু তারিখ দেখানো হয়েছে ২৪ মে ২০১৯ এবং বিল পরিশোধের শেষ তারিখ দেখানো হয়েছে ৩০ জুন ২০১৯। পরে এই তারিখটি কেটে দিয়ে উক্ত অফিসের এসএএ খোরশেদ আলম ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ বিল পরিশোধের জন্য ফের দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের ছলচাতুরি ধরা পড়ে। এভাবে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
অবশেষে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবি সমিতির সদস্য এ্যাড: নুরুল আমীনের মাধ্যমে গত ২১ সেপ্টেম্বর উক্ত লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করে সন্তোস জনক জবাব চেয়েছেন। অভিযোগকারি শওকাত হোসেন রাতে জানান, এভাবে চরম অনিয়ম দূর্ণীতির মধ্যদিয়ে গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বিবাদী পক্ষরা সন্তোস জনক জবাব না দিয়ে মামলা করার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
অপর দিকে শহরের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা বিধান চন্দ্র দাস অভিযোগ করে বলেন, ১১ এপ্রিল ২০১৯ তার বাসায় প্রি-পেইড মিটার সংযোগ হয়েছে। এপ্রিল মাসের একটি বিল মে মাসে ব্যাংকে জমা দেয়া হয়। পরবর্তীতে মে মাসের আরও একটি বিল রাতের আধারে ঘরের দরজার নীচ দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয় তার বাসায়। কিন্তু এপ্রিল মাসেই যেখানে প্রি-পেইড মিটার সংযোগ হয়েছে সেখানে মে মাসের কেন বকেয়া বিল আসবে এমন প্রশ্ন রেখে বলেন, নানা কল্পকাহিনী তৈরি করে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ পোষ্টপেইড থেকে প্রিপেইড রুপান্তরের সময়ের মধ্যে জালিয়াতি করে নানাভাবে গ্রাহকের নিকট থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এসব অনিয়মের প্রতিকারের দাবী করে তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এছাড়াও এধরণের একই অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক বিদ্যুৎ অফিসে এসে সমস্যা সমাধানের জন্য নানাভাবে হয়রানির শিকার যেমন হচ্ছেন, তেমনি তাদের পকেটও খসছেন।
এব্যাপারে রাতে সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হক জানান, ভুক্তভোগি গ্রাহক অফিসে আসলে আমরা বলেছি, তিনি একটি আবেদন করলে আমরা বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে তার বিলটি বর্তমান মিটারে যুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি এধরণের একাধিক অভিযোগ অস্বীকার করে একজন গ্রাহকের দুই বা তিন বার বিল যেতেই পারে বলে মন্তব্য করেন। তবে সেই বিলের বিষয়টি তাকে দেখে শুনে বিল প্রদান করা উচিত ছিল বলেও জানান। সর্বশেষ তিনি এধরণে ঘটনা কোন বিষয় নয় বলেও দাবী করেন।
উল্লেখ্য, ওজোপাডিকোর আওতায় প্রায় ৪৩ হাজার গ্রাহকের অধিকাংশই এখন এধরণের বকেয়া বিলের ঝামেলাই অস্থিতর হয়ে আছেন। অনিয়ম আর দূর্ণীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।