বর্তমানে খুলনা বিভাগসহ রাজশাহী, রংপুর ও পঞ্চগড় জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে আরও কয়েকদিন। একইসঙ্গে সারাদেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। যদিও দেশের পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, তবে দেশের অধিকাংশ অংশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।
এই চিত্র আমাদের সামনে আবারও এক কঠিন বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দেয়—জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের আবহাওয়ায় আগের চেয়ে বেশি চরমতা দেখা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা জনস্বাস্থ্য, কৃষি ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শহরাঞ্চলে গরমের তীব্রতা আরো বেশি অনুভূত হয়, যেখানে কংক্রিটের দালানকোঠা এবং গাছপালার অভাব তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
সামনে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তা স্বস্তির চেয়ে উদ্বেগই বেশি বাড়ায়। কারণ, হঠাৎ করে ভারী বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতা, সড়ক দুর্ঘটনা ও কৃষিজমিতে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে অল্প বৃষ্টিতেই জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ছায়াযুক্ত স্থান এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। শহরাঞ্চলে গাছ লাগানো ও খোলা স্থান সংরক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে।
একইসঙ্গে নাগরিকদেরও উচিত পর্যাপ্ত পানি পান, সরাসরি রোদ এড়ানো এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলেও গরমের প্রভাব মোকাবেলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের অংশ হিসেবে এই পরিস্থিতি আরও ঘন ঘন ও দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই ধারণা। তাই এখনই সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাপপ্রবাহ ও অস্থির আবহাওয়া কেবল একটি মৌসুমি সমস্যা নয়, এটি আমাদের পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিমালার একটি পরীক্ষাও বটে।