দুর্দান্ত চাকুরির ক্যারিয়ার ফেলে রান্না করে উপার্জন করছে তামান্না


মে ৩ ২০২১

‘মাইক্রোবায়োলজিতে এম.এস.সি’ ডিগ্রিধারী তামান্না তাসলিম দুর্দান্ত চাকুরির ক্যারিয়ার ফেলে রান্না করে উপার্জন করছে। এটা আপনাদের হয়তো বিশ্বাসই হবেনা, কিন্তু এটাই সত্য। এমন দুর্দান্ত যে মেয়ের লেখাপড়া, তাহলে কেন এতো কষ্ট করে টাকা উপার্জন করছে? জানতে মন চায় তাই না ! আমারও জানতে ইচ্ছা হয়েছিলো।  আসুন আজ মেয়েটির সংগ্রাম মুখর জীবনের গল্প শুনি।

এই গল্প পড়ে একজন ছেলে বা মেয়ে যদি নিজের ভাগ্য বদলের সুযোগ পায় তবে সেটাই হবে আমার লেখার স্বার্থকতা। ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে দুই বছর এবং সাতক্ষীরা সিবি হাসপাতালে এক বছর স্যায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে কাজ করার পরও মেয়েটি চাকুরি ছেড়ে দিলো। একদিকে নিজের ছোট মেয়ের দেখাশুনা করা, অন্যদিকে চাকুরিতে সারাক্ষণ অন্যের কাছে ছোট-বড়ো কথাশুনা, এটা এভাবে, ওটা ওভাবে করো- এই সব থেকে মুক্তি পেতে নিজে কিছু করার চিন্তা আসে তামান্নার। নিজের পৃথিবী নিজেই গড়ব এই ভেবে উদ্যোক্তা জীবনে প্রবেশ।

মেয়েটি তখন ঢাকায়, মার্কেট ঘুরে ঘুরে আনকমন ইনডোর প্লান্টের ছবি “সাতক্ষীরা অনলাইন শপ”-গ্রুপে পোষ্ট দেওয়া শুরু। এইভাবেই শুরু মেয়েটির উদ্যোক্তা জীবন । কিছুদিন পর সাতক্ষীরা ফিরে শুরু হলো শখের রান্না। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি ছবি আঁকতে পছন্দ করতো। পরবর্তী জীবনে এই রান্না আর আঁকতে পারার ক্ষমতায় মেয়েটির উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজ করে দিলো। মেয়েটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো এই পথচলায় কার অবদান সবথেকে বেশি। অকপটে মেয়েটি স্বীকার করলো সাতক্ষীরা অনলাইন শপের পরিচালক ও সাতক্ষীরা অনলাইন শপ গ্রুপের এডমিন শেখ ইমরান হোসেন স্যারর কথা। শীতের দিনে অর্ডারকৃত চিতই পিঠা তৈরি করতে করতে মেয়েটি হাঁপিয়ে যেতো। বেশিরভাগ দিন এমন হয়েছে ইমরান স্যার কাকডাকা শীতের ভোরে রস ভর্তি হাঁড়ি নিজেই পৌঁছে দিয়ে গেছেন বাড়িতে এবং শহরের বাইরে নিজে ডেলিভারির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা অনলাইন শপের পরিচালক শেখ ইমরান হোসেন স্যার নিঃস্বার্থ ভাবে, বড়ো ভাইয়ের মতো পাশে ছিলেন বলেই মেয়েটির এতো দূর আসা সহজ হয়েছে। মেয়েটির সাথে কথা না হলেই জানাই হতো না ইমরান স্যারের এই অবদানের কথা। পাশাপাশি মেয়েটি কৃতঞ্জতা প্রকাশ করেছিলেন তার চাচা বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলহাজ্ব ডা. মো. আবুল কালাম বাবলার প্রতি। মেয়েটির মা ছিলেন শিক্ষক। মেয়েটি এম এস সি ডিগ্রীধারী তারপরও মেয়েটির এই যে এতো এতো কষ্ট, পরিশ্রম সবই নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করা, স্বাধীন ভাবে কিছু করার জন্য। ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা জানতে চাওয়ায় মেয়েটি বলেছিলো-কখনো যদি আল্লাহ পাক সুযোগ করে দেন তবে নিজে একটা ডায়াগনস্টিক ল্যাব দিবো। যেখানে স্বল্প খরচে সবাইকে সেবা দিব ইনশাআল্লাহ।

উদ্যোক্তা জীবনের প্রাপ্তি জানতে চাওয়ায় মেয়েটি বললো আমাকে দেখে যদি একজন ছেলে-মেয়েও সঠিক পথের দিশা খুঁজে পায় তাতেই আমার তৃপ্তি। মেয়েটি জানায় আমার পারিবারিক স্বচ্ছলতা থাকার পরেও আনন্দের সাথে উদ্দ্যোগী হয়ে নিজে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে করে কোন বেকার ছেলে-মেয়ে কোন কাজকে ছোট মনে না করে কিছু একটা কাজ করার চেষ্টা করে।

বর্তমানে মেয়েটি কাজ করছে চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, নারিকেল নাড়ু, পুডিং কেক, পাস্তা, দই বড়া, হালিম, চটপটি, ফুচকা, গুড়ের পায়েস, শাহি জর্দা, সিঙ্গাড়া, চিকেন ভেজিটেবল রোল, কাবাব পরোটা, চাওমিন, ডালের বরফি, পটেটো টুইস্টার, চিকেন পটেটো স্টিক, ডাল পুরি, আলু পরোটা, প্রণ টেম্পুরা, কাটলেট, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, গরুর বট/ ভুড়ি, বিভিন্ন ধরনের কাবাব। পাশাপাশি হ্যান্ডপেইন্ট পন্য যেমন ওয়ান-পিস, বেবিড্রেস, কুশন-কভার, হ্যান্ডমেইড জুয়েলারি, স্ক্রিন কেয়ার প্রোডাক্ট স,কসমেটিক্স, ডালের বড়ি, ঘি এবং মধু নিয়ে। “সাতক্ষীরা অনলাইন শপ”-গ্রুপের সাথে মেয়েটির পথচলা শুরু অক্টোবর ২০২০ ইং তারিখে। সাতক্ষীরা অনলাইন শপ”-গ্রুপ থেকে মেয়েটির মোট বিক্রয়ের পরিমাণ ৮৭,৪০০ টাকা।

মেয়েটির নাম: তামান্না তাসলিম
ফেইসবুক পেজের নাম: T.T’s Collections
তামান্নার সকল পণ্য দেখতে ভিজিট করুনঃ www.satkhiraonlineshp.com

লিখেছেন: সাতক্ষীরা অনলাইন শপের উদ্যোক্তা নারগিস সুলতানা, ফেইসবুক পেজের নাম: লিপির আয়োজন।
কৃতজ্ঞতায়, শেখ ইমরান হোসেন, পরিচালক: সাতক্ষীরা অনলাইন শপ, এডমিন:  Satkhira Online Shop Group
নতুন উদ্যোক্তারা গ্রুপে জয়েন করতে ভিজিট করুনঃ https://www.facebook.com/groups/satkhiraonlineshopbd