ই’তিকাফ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো- অবস্থান করা, নিঃসঙ্গ থাকা, নিবেদিত হওয়া। তবে শরীয়তের পরিভাষায় জামাতের সাথে নামায আদায় করা হয় এমন মাসজিদে ই’তিকাফের (মহান আল্লাহর নৈকট্ট লাভের) নিয়তে অবস্থান নেয়াকে ই’তিকাফ বলা হয়। তবে ই’তিকাফ-এর প্রকৃত তাৎপর্য হলো নিজের অন্তরাত্মাকে প্রেমাস্পদ আল্লাহর সাথে বেঁধে দেয়া, গাইরুল্লাহ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা।নির্জনতা অবলম্বন করে এক আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া। হাকীকি বন্ধু মাওলা পাকের সাথে গোপন আলাপের মাধ্যমে মজা অনুভব করা এবং মন-মনন ও চিন্তা-ফিকিরকে এক আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। (মাওসূআতুল ফিকহিল ইসলামী- ৩/২০০)।
আর এক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার আসমায়ে হুসনা, তাঁর সত্ত্বা ও গুণাবলী নিয়ে ফিকির করা, তাঁর দান ও অনুগ্রহ স্মরণ করা, তাঁর সৃষ্টি ও কলাকৌশল নিয়ে ভাবা, জিকির, দুআ, ইস্তিগফার, নামায ও কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মধে ডুবে যাওয়া অত্যন্ত কার্জকর। সংগত কারণেই ই’তিকাফে থাকা অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে চুপ-চাপ বসে থাকা ভাল নয়। আর গল্প-গুজবে লেগে থাকা বা যে কোন ধরনের গুনাহে লিপ্ত হওয়া ই’তিকাফের তাৎপর্য্যকে বিনষ্ট করে দেয়।
ই’তিকাফ একটি নফল ইবাদত; যা এক মুহুর্তকালের জন্যও হতেপারে। এর জন্যে নির্দিষ্ট কোন সময় বেঁধে দেয়া নেই। আমরা যখনই মাসজিদে যাই তখনই ই’তিকাফের নিয়ত করে নিতে পারি। এতে করে যতক্ষণ মাসজিদে থাকা হবে ততক্ষণ ই’তিকাফের ছওয়াব হয়ে যাবে। আর মাসজিদ থেকে বের হলে ই’তিকাফ খতম হয়ে যাবে।
তবে রমাযানের শেষ দশকের ই’তিকাফ সুন্নাতে মুআক্কাদা আলাল কিফায়া। হযরত ইবনে উমার রা. বলেন, রসূলুল্লাহ স. রমাযানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করতেন। (বুখারী—১৮৯৮)। এ হাদীসসহ আরো অন্যান্য হাদীসের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ স. রমযানের শেষ দশকের ই’তিকাফ কখনো পরিত্যাগ করতেন না
রসূলুল্লাহ স.-এর ইন্তিকালের পর তাঁর পবিত্রাত্না বিবিগণও এ ই’তিকাফ পরিত্যাগ করতেন না। খুলাফায়ে রাসেদাসহ সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও ছিল এ ই’তিকাফের যথেষ্ট গুরুত্ব। সাথে সাথে রসূলুল্লাহ স. রমাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ জন্য ই’তিকাফের চেয়ে সহায়ক মাধ্যম আর কিছুই নেই। তাই রমাযানের শেষ দশকের ই’তিকাফকে ছুন্নাতে মুআক্কাদা আলাল কিফায়াহ সাব্যস্ত করা হয়েছে।
অর্থাৎ কোন মসজিদ মহল্লার কিছু মানুষ উক্ত ই’তিকাফে বসলে মহল্লার অবশিষ্ট সকলের পক্ষ থেকে উক্ত ছুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। আর কেউ না বসলে সকলেই সুন্নাত তরক করার দায়ে দায়ী হবে। এ জন্যে ২০ রমাযানের সূর্য ডোবার পূর্বেই ই’তিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে ঈদের চাঁদ উঠার পরে মসজিদ থেকে বের হলে ই’তিকাফের উক্ত ছুন্নাত আদায় হবে। অন্যথায় স্বল্প সময়ের জন্য ইতিকাফ হলে তা নফল বিবেচিত হবে।