রিয়াদ হোসেন
যে পথ ধরে হেঁটেই চলেছি এ পথের শেষ কোথায় ? এ পথের শেষ প্রান্তে কি রয়েছে ? কোথায় কি গিয়ে থামবে এ পথ ! সে কথা হয়তো এখনো কেউ বলতে পারবে না।আর না পারাটাই স্বাভাবিক। জুন থেকে দেশের সব অফিস, শপিংমল খোলা হয়েছে। রাস্তায় ছুটছে মানুষ।চলছে গনপরিবহন। লোকে লোকারণ্য বাজার ঘাট। তিল পরিমাণ ঠাই নেই শপিংমল, কাঁচা বাজারগুলোতে। বিশেষকরে বিশেষ এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে গনপরিবহনে। গনপরিহনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে বলেই কিন্তু ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। কিন্তু একদিকে গনপরিবহনগুলো দ্বিগুন ভাড়া এবং অন্যদিকে সিটিং সার্ভিসের নাম করে যত্রতত্র লোক উঠানোর নামেই চলেছে সে কয়েক দিন।
প্রথম দিন থেকেই কিন্তু গণপরিবহনে যাত্রীদের যে ঘেঁষাঘেঁষি তা কিন্তু সাধারণ মানুষ দেখেছে।তবে সেপ্টেম্বর থেকে গনপরিবহনের সকল বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে।যার কারনে কিছুটা হলেও হাফ ছেড়ে বাঁচছে সাধারন মানুষ।
একজন সরকারি কিংবা বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত মানুষগুলোকে প্রতিনিয়ত এই দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অফিস করার জন্য রোজ বের হতে হচ্ছে। প্রথমত সড়কে নামলে ভয় থাকে সড়ক দুর্ঘটনার। আর এখন ভয় দুটো, যার মধ্যে প্রথম ভয় এখন করোনা।দ্বিতীয় ভয় সড়ক দুর্ঘটনা। গত কয়েকদিনে দেখেছি সড়কে নামছে হাজারো মানুষ। সামাজিক দূরত্বের লেশ মাত্র কোন নমুনা কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। কোন মতেই কিন্তু থামছে না যাত্রাপথের এ সংকটগুলো।
প্রথমদিকে মানুষ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস, পোশাক ব্যবহার করলেও সময়ের পরিবর্তনে সেগুলো আজ দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে।তবে খুব কম সংখ্যক মানুষ এখনোও এগুলো মেনেই চলেছে।তার মধ্য ডাক্তার, সাংবাদিক, শিক্ষকদেরকেই বেশি মানতে দেখা যাচ্ছে।
পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বাড়তি শাকসবজির, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে চাল-ডাল সবকিছু।এভাবে সবকিছু যখন বাড়তি দিতে হচ্ছে, তখন করোনার আগের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষগুলো প্রতিদিনই একবার করে মারা যাচ্ছে। অনেকেই তো বলেই ফেলেছেন, আমরা করোনায় নয়- মরবো খিদের জ্বালায়।
এই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা অফিস করছে তাদের বেতন কি বাড়িয়েছে? এমন কোন খবর কি আপনার আমার চোখে পড়েছে? বরং এটা চোখে পড়েছে যে,অনেক প্রতিষ্ঠান ৪০ শতাংশ বেতন কেটে নিয়েছে। তাহলে এই সংকটপূর্ণ সময়ে বাঁচবে কিভাবে একটি মানুষ, একটি পরিবার, একটি সমাজ তথা একটি দেশ? এই সঙ্কটে যদি সমাজের একটা বড় অংশ শ্রেণি না খেয়ে মারা যায় এবং মনোবল ও কর্মনিষ্ঠা হারিয়ে ফেলে, তাহলে তাদেরকে আমরা ফেরাব কীভাবে? মানুষ বেঁচে থাকলে উন্নয়ন দরকার, মানুষ যদি না থাকে তবে উন্নয়ন কার জন্য?
পোপ ফ্রান্সিসের একটা কথা বলি, ‘অর্থনীতির চেয়ে মানুষের জীবন গুরুত্বপূর্ণ’ কথাটার বিশ্লেষণ হয়তো অনেকে অনেক ভাবে করবে। তবে আমি খুব স্বল্প পরিসরে একটি কথাই বলি, যদি আপনি নিজেই না থাকেন তাহলে অর্থনীতি দিয়ে কি হবে? তবে দেখবেন, অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে আপনার আমার চাকা যেন বন্ধ না হয়ে যায়।
যাই হোক, আমাদের ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি শ্রমিক শ্রেণি। বর্তমান সংকট মধ্যবিত্তকে ও শ্রমিক শ্রেণিকে যে আর্থিক বিপদে নিপতিত করেছে, সেখান থেকে তাদেরকে বাঁচানো দরকার- যদি আমরা অর্থনীতির গতিকে সঙ্কট-পরবর্তীতে আবার তরান্বিত করতে চাই।
সবশেষে একটি বিষয়ই বলতে চাই,সব প্রতিকূলকতা পাড়ি দিয়েই বেঁচে থাকাটা সবথেকে বেশি মধূময়। আমাদেরকে বাঁচতে হবে, নতুন করে বাঁচতে হবে। আপনার আমার সকলের পরিবার নিয়েই আমাদের চলতে হবে সামনে অজানা পথে। প্রতিদিন অফিস করতে হবে, নিজ কর্মক্ষেত্রে যেতে হবে তবে অবশ্যই সচেতনতার সাথে পথ পাড়ি দিয়ে।কারন আপনি যখন বের হন তখন আপনার নিজের জীবনের জন্য শুধু নিজেই মায়াটুকুই থাকে না,থাকে আপনার বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে,স্ত্রীর ফিরে তাকানো। কে কি বললো, কে কি করলো, এটি দেখার সময় কিন্তু এখন নেই, এখন একটাই সময় নিজেকে বাঁচা, নিজের পরিবারকে বাঁচানো। যদি এভাবেই বাকি পথটুকু পাড়ি দিতে পারেন তাহলে নতুন দিগন্তে নিজের পরিবারকে বুকে জড়িয়ে আরো একবার বলতে পারবেন আমি ভালো আছি !
লেখক: সংবাদকর্মী